লো-প্রেশার (Low Blood Pressure) এর জন্য করণীয়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও জীবনধারার পরিবর্তন
লো-প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ (Hypotension) হলো এমন একটি অবস্থা যখন আমাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যায়। সাধারণভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ mmHg। কিন্তু যখন সিস্টোলিক প্রেসার ৯০ mmHg-এর নিচে এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৬০ mmHg-এর নিচে নেমে যায়, তখন তাকে লো-প্রেশার ধরা হয়। অনেকেই মনে করেন উচ্চ রক্তচাপ বেশি বিপজ্জনক, কিন্তু লো-প্রেশারও যদি সময়মতো প্রতিকার না করা হয়, তাহলে এটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
লো-প্রেশারের লক্ষণসমূহ (Symptoms of Low Blood Pressure)
লো-প্রেশারের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
-
মাথা ঘোরা বা মাথা হালকা লাগা
-
দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
-
দুর্বলতা বা অবসাদ অনুভব করা
-
বুক ধড়ফড় করা
-
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (fainting)
-
ঘুমঘুম ভাব
-
বমি বমি ভাব
-
শরীর ঠান্ডা লাগা বা চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
এই উপসর্গগুলো নিয়মিতভাবে দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লো-প্রেশারের কারণসমূহ (Causes of Low Blood Pressure)
লো-প্রেশারের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ দেওয়া হলো:
-
জলস্বল্পতা (Dehydration): শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে।
-
উপোস থাকা বা অনিয়মিত খাওয়া: দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে গ্লুকোজ লেভেল কমে গিয়ে রক্তচাপ নেমে যায়।
-
রক্তস্বল্পতা (Anemia): শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে রক্তচাপ কমে যায়।
-
হৃদরোগ: হার্ট ভাল্ভের সমস্যা, হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা ইত্যাদির কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
-
হরমোনের সমস্যা: যেমন অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের সমস্যা বা থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
-
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু উচ্চ রক্তচাপ বা বিষণ্নতা (depression) নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ঔষধ লো-প্রেশার সৃষ্টি করতে পারে।
-
গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে কিছুটা কমে যেতে পারে।
-
সংক্রমণ বা এলার্জি শক (Septic or Anaphylactic shock): মারাত্মক ইনফেকশন বা অ্যালার্জির কারণে রক্তচাপ হঠাৎ অনেকটা কমে যেতে পারে।
লো-প্রেশার হলে করণীয় (What to Do in Low Blood Pressure)
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
লো-প্রেশারের সময় শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। শরীর জলহীন থাকলে রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে।
২. লবণযুক্ত পানি পান করুন
লো-প্রেশার হলে এক গ্লাস পানিতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লবণ খাওয়া ঠিক নয়।
৩. চিনি ও লেবু মেশানো শরবত
চিনি ও লেবু মিশিয়ে এক গ্লাস শরবত বানিয়ে খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। এটি গ্লুকোজ লেভেল বাড়ায়।
৪. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
কফি বা চা সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
৫. স্যালাইন গ্রহণ
প্রয়োজন হলে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) খাওয়া যেতে পারে। বেশি দুর্বলতা থাকলে ইনজেকশন স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে—এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করুন।
৬. ছোট ছোট খাবার খান
বড় মাপের খাবার খাওয়ার বদলে দিনের মধ্যে ৫-৬ বার অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া লো-প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। খাবারে প্রোটিন, আয়রন ও ভিটামিন বি১২ রাখা উচিত।
ঘরোয়া প্রতিকার ও স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস (Home Remedies and Healthy Habits)
-
বেসন বা ছোলার ডাল দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া যেতে পারে, যেটি শক্তি জোগায়।
-
তাজা ফলমূল, বিশেষ করে কলা, ডাবের পানি, আপেল ইত্যাদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
-
লবণভাজা বাদাম বা চিড়া লো-প্রেশারের সময় উপকারী হতে পারে।
-
পা উঁচু করে বিশ্রাম নেওয়া রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন, কারণ এটি রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
-
বারবার অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
-
শ্বাসকষ্ট
-
বুকে চাপ বা ব্যথা
-
তীব্র দুর্বলতা
-
চোখে অন্ধকার দেখা বা দীর্ঘ সময় মাথা ঘোরা
SEO-বান্ধব কীওয়ার্ড (SEO Keywords):
-
লো প্রেশার প্রতিকার
-
লো প্রেশার হলে করণীয়
-
নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ
-
লো প্রেশার চিকিৎসা
-
হাইপোটেনশন থেকে মুক্তি
-
প্রাকৃতিকভাবে লো প্রেশার কমানোর উপায়
-
ঘরোয়া প্রতিকার লো প্রেশার
-
স্বাস্থ্য টিপস বাংলা
-
রক্তচাপ কমে গেলে কি করব
-
লো প্রেশারের কারণ ও প্রতিকার
উপসংহার
লো-প্রেশার (Low Blood Pressure) কোনো গুরুতর সমস্যা না হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে অবহেলা করলে বড় স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই, রক্তচাপ নিয়মিত মাপা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, ও পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ ও বুদ্ধিমানের কাজ।
إرسال تعليق